চিঠি এল

কত বছর পর তোমার চিঠি পেলাম আবার:
এই সকাল বেলার রৌদ্রে
আমার হৃদয়ে
বারুণীর কোটি-কোটি সহচরী
তিমির পিঠ থেকে মকরের পিঠে আছড়ে প’ড়ে
নটরাজ্ঞীদের মতো
মহান সমুদ্রের জন্ম দিল।

আমি মুদ্রিত চোখ নিয়ে
তোমাকে অনুভব করি,
মনে হয় যেন সূর্যাস্তের জাফরান আলোয়
সাদা গোলাপের বাগান ছড়িয়ে রেয়েছে মাইলের-পর-মাইল,
একটা সজনে-গাছও নেই,
তাই বিরাট আকাশ-চিল উড়ে এসে
শূন্য বাতাসের ভিতর আঁকাবাঁকা ব্যর্থ জ্যামিতির দাগ রেখে গেল শুধু,
তারপর দূর নীড়ের দিকে উড়ে গেল
হৃদয়ের পানীয়ের দিকে।

সমস্ত কলরব ও আলোর থেকে ফিরে এসে
সমস্ত জনতা এড়িয়ে— এক কিনারে— অন্ধকারে—
তুমি আমার পাশে এসে বসলে
মনে হল যেন সমস্ত দিনের শেষে
শিশিরের শব্দ পেয়েছে যেন বক-নারী
একটা উঁচু গাছের
উঁচু ডালের থেকে আরও উঁচু ডালের দিকে
উড়ে এল সে
বিছানো ডানার প্রতিটি পালকের খাঁজে-খাঁজে
শঙ্খসাদা অব্যবহৃত আস্বাদ নিল
অবিজ্ঞানের প্রচুর ঘুম নিয়ে
নিজেকে ব্যবহার করতে এল
শান্ত রাত্রির পবিত্রতার ভিতর।

তোমার মুখ নিরপরাধ সাদা পাখির মতো সুন্দর
কিন্তু কোনও বিরাট আকাশ-পাখির মতো
তির্যক চোখে আমি যদি তাকাই
মনে হয় যেন দানবী-রূপসির হাতে
প্রান্তরের অন্ধকার রাত্রি দাঁড়িয়ে রয়েছে
আমার সমস্ত শরীর ভীত হয়ে ওঠে
আমার হাতের আঙুল
মুমূর্ষু সরীসৃপের মতন বাঁকা হয়ে
নিস্তব্ধ হয়— মৃত হয়—
আমি বিশাল আকাশ-পাখি
গহন রৌদ্রের দিকে উড়ে যাই আবার।

এই পৃথিবীর অব্যবহারের দিকে তাকিয়ে
কেমন একটা তুহিন ছিল হৃদয়ে:
তোমাকে দেখে ভেঙে গেল;
সমুদ্র যখন (শীতের শেষে) আকাশকে ভালবাসে
শত-শত স্ফীত খোঁপার প্রেমিকা নারীর জন্ম দেয় তার জলের ভিতরে
তাদের সমস্ত ক্ষুধা জড়ো ক’রে
আকাশের পানে গভীরভাবে নিক্ষেপ করে সে:
তোমার উত্তাল গম্বুজের উদ্দ্যেশে
আমার অনুভূতির আলোড়ন—
সেই সব স্ফীত খোঁপার নারী
তোমার নিস্তব্ধ নীল ভাস্কর্যকে চূর্ণ ক’রে
গুঁড়োয়-গুঁড়োয় পৃথিবীর শস্যক্ষেতে ছড়িয়ে দেবে;
হৃদয়ের ভিতর প্রতিভার নব-নব সন্তান কলরব ক’রে উঠবে।

কবিতা। আষাঢ় ১৩৬৪

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা