মাঝরাতে উঠিল সে

মাঝরাতে উঠিল সে বিছানার থেকে
দুই হাতে আর্যমৃতর মতো মুখখানা ঢেকে
মনে হল আফ্রিকার জুলু
এর চেয়ে ঢের ভালো— এর চেয়ে ভালো হটেনটট
এর চেয়ে জাভা ভালো— কিংবা মস্কট
এর চেয়ে ভালো হনলুলু।

বরং হাশিশ খেয়ে নাচিবে সে বালিদ্বীপবাসিনীর মতো
নাচিবে— নাচিবে— আর কোনও দিন হবে না বিরত
আকাশের নক্ষত্রের রাশি
মনে হবে অগণন চীনেহাঁস কলরব ক’রে
মন্থনফেনার মতো সারা-রাত ঘুরিতেছে নয়নের ঘোরে
হয়তো অমৃত এক উঠিবে উদ্ভাসি।

কিন্তু কিছু ওঠে না ক’— এইখানে শুয়ে ব’সে থেকে
রাজাবাজারের থেকে রোজ সূর্যকে ঝাপ দিতে দেখে;
যেন সে নফর এক— মুদ্দাফরাস
যেন সে মশারি ধ’রে টানিতেছে রোজ ভোরে ত্রাস
উটের জাগ্রত হ্রেষা— দৌড়ের প্রতিভা ভালোবেসে
এনেছে সে খানিকটা জল আর ঘাস।

যদি বলি বিছানার পাশে এসে বস— বস, প্রিয়
এই ঘাস খাদ্য, সখা— এই জল তোমার পানীয়
হু-হু হেসে ওমনই বলিবে
নাও— নাও— দুয়ারটা খুলে ফেল— মশারিটা টেনে
এই বার ফিনাইলের মতো তুমি লাফ দিয়ে পড়ো দেখি ড্রেনে
এক দিন হয়তো-বা সুফল ফলিবে।

তুমি মনে করো কা’রা প্লুত দেহে সারা-রাত ঘাসে খরগোশ
তুমি মনে করো কা’রা ময়রার দোকানের মিঠে বারকোশ
তুমি ঢের মনে করো— তুমি!
এর পর মশারিও র’বে না ক’— র’বে না ক’ পাহারা-বদল
ক্রমে-ক্রমে বাড়িতেছে গাড়ি-গাড়ি মানুষের রাত্রির মল
আরও ব্যাস লভিতেছে গোবি-মরুভূমি।

তুমি ভাবো আঙুরের মতো কা’রা তুলোর বালিশে শুয়ে আছে
লেমুরের মতো কা’রা ফাঁকি দিয়ে লাফাতেছে গাছে
রাঙা ফল ছিঁড়ে সারা-দিন
তুমি ভাবো কঠিন রৌদ্রকে ফেঁড়ে কা’রা মাছরাঙার মতন
আশ্চর্য জ্যাকেট পেল— কাঁচের ডিবায় প্রেমে তেতলায় করে সন্তরণ
অবিরাম লাল— নীল মীন।

কিংবা কা’রা গুমরায়ে ব’সে থাকে সারা-দিন— কোনও এক নিবিড় সকালে
লুপ্ত বিহঙ্গের মতো এসে দেখা দেয় চার আনার টিকিট দেখালে
কিউই-কিউই ব’লে আত্মার আনন্দ জানায়
অথবা কাদের কাছে এ-পৃথিবী অনন্ত বিকেলবেলা
কার্নিভালে কাঠের ঘোড়ার পিঠে নির্জন সওয়ার-সওয়ার খেলা
মাছিটাও বসে না ক’ নাকের ডগায়।

আসিতেছে— আসিতেছে— আরও ঢের মানচিত্র কম্পাস ঘড়ি
এর পর তারাও পাগড়ি বেঁধে দাঁড়াবে প্রহরী
সঙ্গিন কাঁধে টেনে নিয়ে সারা-রাত
মাথার উপর দিয়ে পালে-পালে উড়ে যাবে কর্মোরেন্ট— বক
ইহারা বিহঙ্গ তাই— নব-নব বসন্তের দিকে পলাতক
গরম আকাশে যেন মুহূর্তের করকাপ্রপাত।

তবু তারা মুহূর্তের স্ফূর্তি শুধু— সঙ্গিন তোল যদি: তবে তারা ভীতি
তাহাদের প্রাণে নাই কোনও কিছু জটিল প্রমিতি
সরোবর ঘিরে করে ডিনামাইটের মতো ধ্বনি
বড়ো-বড়ো ব্যাঙ্ক আর ফ্যাক্টরি গড়িবার আগে
আমাদের কলমের নিবে শুধু চুমুকের মতো বড়ো-বড়ো ধ্বনি জাগে
চোখের পাতার শব্দে দেউলিয়া হয়ে যায় বাজার বিপণি।

আসিতেছে— আসিতেছে— আরও ঢের মানচিত্র— ঘড়ি— কম্পাস
সারা-রাত মিঠে ঘাসে— বারকোশে— কিংবা গণিকার সাথে যারা করে সহবাস
তাহাদেরও হৃদয়ে গণিত
এক দিন জেগে উঠে তাহাদের আগাগোড়া জীবনের নেবে পরিচয়
(তাহারা বলিছে কেঁদে): দেয়ালের ঘড়িটারে এখুনি-যে প্রতীকের মতো মনে হয়
কোনও কিছু হবে ব’লে সারা-রাত সহিতেছে কী ভীষণ শীত!

কোনও কিছু সাধিত হতেছে ধীরে— কোনও কিছু স্থির সংঘটন
আসিতেছে— কাঠের-ঘোড়ার পিঠে চিরপ্রচলিতের জীবন
ময়দানে ফিরোজা বিকেলবেলা
ভোটকম্বলের মতো— তার নিচে মানুষটা নীরবে কাঁদিছে
কাক হয়ে— বক হয়ে— মালয়ের ব্যাং হয়ে উড়ে যাবে কেবলই ফাঁদিছে
ঘোড়াটাও কাঠ— হেসে মারিতেছে ঠেলা।

রূপার বাসনে কেউ— কিংবা কেউ মাটির হাঁড়িতে
মৃত মাংস যেন সব— জীবনের শীতে
প’ড়ে আছে আকাশের গূঢ় জ্যোৎস্নায়
বাতাপি, বাতাপি— ব’লে কেউ যেন ডাকিতেছে ধীরে
এক দিন উড়ে যাবে পৃথিবীর পেটটাকে চিরে—
যেইখানে অগস্ত্যর পাকস্থলী ঘড়ি আলপিন ঘিলু ক্যাটেলগ খায়।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা