কখনও জলের ঘ্রাণ

কখনও জলের ঘ্রাণ— দূর থেকে— হরিয়াল-পাখির মতন
টের পেয়ে চোখের পিপাসা আমি মিটায়েছি বিবর্ণ নদীর
ধূসর লোমের দিকে চেয়ে থেকে— কার্তিকের মাঠে
যেখানে অনেক ঢিল নিজেদের কাজ বুঝে নিয়ে
ইতস্তত রয়ে গেছে সারা-দিন সূর্যের আলোয়
সেইখানে আমি এক অভিক্ষেপ— আধুনিক ব্যস্ত পৃথিবীর
অর্থনীতিময় ভাষা— জমকালো ডোরা-কাটা কোটের পকেটে
ফেলে রেখে— এখানে বাদামি পাতা হেমন্তের মাঠের ভিতরে
ভেড়া’র গায়ের লোমে লেগে থেকে সহোদর রং
হয়তো আস্বাদ— তৃপ্তি খুঁজে পেল দেখে আমি আধেক বিস্ময়ে
মাঠের ধূসর বায়ু গিলে খাই— আমাদের হৃদয়ের সমান্তরালে
অন্য এক সময়ের স্রোতে আমি ঢের দিন ঘুরে
মিশে গেছি— কখনও ঝাউয়ের নিচে হেমন্তের বিকেলের সতর্ক বটের
আমাকে লোষ্ট্রের মতো মনে ক’রে— আমার চোখের ঠান্ডা পথে
দাম্পত্যের সব-চেয়ে গোপনীয় সুড়ঙ্গে ঘুরায়ে
ঘড়িকে কবোষ্ণ ক’রে রেখে যায়— মানুষের হৃদয়ের পথে
যখন সে ক্রমশই হিম হয়ে যেতেছিল— সর্বেশ্বর দাম—
নিড়োনো খেতের ‘পরে নির্জন কোদাল, কাস্তে রেখে
বহু ক্ষণ (ঘড়ির সময় তবু ভুলে গিয়ে)— আমাদের দিকে
হয়তো-বা প্রত্যাসন্ন কোনও এক মরণের ধূমা এ
তবুও এড়ায়ে যাবে— অন্ধকারে— বেলে মাটি ছেড়ে
এখানে মুলো’র খেত নীরবে বানানো যায় ব’লে
বিকেলের জাফরান আলো তাকে জড়ায়ে রেখেছে রোজ— আজও
রয়ে গেছে— নিকটের উঁচু-উঁচু আঞ্জিরের থেকে
সূর্যের সোনালি আলো যেন কোনও চালুনির ফাঁকে
অসংখ্য স্বর্গীয় ছ্যাঁদা খুঁজে নিয়ে অবিরল কালো গুঁড়ো মাটির উপর
বিভিন্ন নমুনা নিয়ে প’ড়ে আছে সর্বেশের চোখের নিকটে
মানুষ তবুও তার দুই হাত তুলে নিয়ে বুকের উপরে
পঞ্জরের কথা ভাবে— ক্বচিৎ মুলো’র কথা, ইঁদুরের রোল
শোনা যায়— নিকটে পিপুল-গাছে জ্ঞানময় পেঁচা
এখনও শূন্যের শ্রুতি— তবুও আমার আগে সর্বেশ্বর দাম
ধীরে-ধীরে স’রে গেল— কোদাল— কাস্তে— মাটি— তন্ময়তা ধূসর শরীরে
একাকী জড়ায়ে নিয়ে— মানুষের শরীরের নাড়ি-নক্ষত্রের মতো চুপে
অচেতন অনুভব নিয়ে ক্রমে মিশে গেল বাংলা’র বড়ো অন্ধকারে
তবুও গভীর এক কৌতূহলে পরিত্যক্ত ভূখণ্ডের কাছে
আমি সেই মানুষের স্থান নিয়ে ঘণ্টা-টাক একা
দাঁড়ালাম, অথবা পকেটে ঘড়ি ব’লে গেল বিক্ষুব্ধ আক্ষেপে
এখন একটি ঘণ্টা সমুত্তীর্ণ হয়ে গেল— মিটিংয়ের দিন
বাজেট-মিটিং আজ— কোদালে উৎক্ষিপ্ত ভিজে মাটির ভিতরে
অসংখ্য মুলো’র বীজ— আমার আঙুলে স্নেহে উঠে এসে স্বাতী’র আলোয়
দেখা দিল— আমাদেরও সমীচীন বাজেটের হাড়, ছাতকুড়ো
রয়ে গেছে— গ্যাসের আলোয় তবু সে-সব কঙ্কালগুলো আর-এক রকম।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা