বিলোল নৃশংসতা
চারি-দিকে রয়েছে বিলোল নৃশংসতা
মৃত্যু, এই সত্তার গাঢ় অপমান
তবু যদি বলা যেত— কোনও দিন পৃথিবীতে
ছাগলেরা পেয়েছে কল্যাণ
অথবা আগামী কাল অর্ধছাগসিংহ-রূপ
কোনও এক পূর্ণতর পদবিক্ষেপে
ছাগল সিংহকে যাবে চেপে
প্রয়োজন র’বে না ক’ মেঘগর্জনের
কুটিল ব্যাখ্যার থেকে দার্শনিক পাবে পরিত্রাণ
ভবিষ্যৎ যদি তবে এ-রকম হয়
কী শ্লোক রচনা করিবে বর্তমান
এখানে প্রান্তরে ঢের উঁচু গাছ আছে
তাদের বাকলে স্থির— স্থিরতর ঘ্রাণ
ভাঁড়ারের ম্লান পনিরের
তাদের বৃহৎ প্রশাখায়
কৃকলাস কৃতাঞ্জলি হয়ে আজও সূর্যকে চায়
যদিও জমেছে বুকে সৌর গ্লানি ঢের
তবুও উত্তরখণ্ডে হয়তো রয়েছে কিছু বৃহত্তর দান
চারি-দিকে ভাঙা দেয়ালের পরে এইখানে জনপ্রাণী নাই
একটি মশা’ও আজ পালায়েছে শহরের মীমাংসার দিকে
পায়ের নিচের থেকে দুই মুঠো বালি নিয়ে যদি আমি শূন্যে ছড়াই
একটি আলাপী ভূতও আসিবে না এই সব ত্যক্ত বারিকে
আমার এ-দিনান্তের বালখিল্যে প্রত্যুত্তর দিতে
তবু আমি লাটিমের মতো ঘুরে সারা-দিন নগরীর ভিড়ে
ভগ্নজানু যোদ্ধাকে যখন দিয়েছি ঠেলে দ্বৈপায়ন-হ্রদের তিমিরে
তখন অযুত বর্ষ শেষ হল পুনর্বার একটি দিনের পরিধিতে
বহু দিন আগে ব্যাস গাঢ় টিটকারি দিয়ে গিয়েছে সে-সব কথা লিখে।
কোন্ সিদ্ধ অঙ্গনা এখানে এনেছে তবে আমার এ-হৃদয়কে টেনে
হৃদয়কে— যেইটুকু উইয়ে-কাটা হয়ে যেতে বাকি আছে— তার
গন্ধর্ব, শেয়াল, সাপ, দেবতার টেবিলের উচ্ছিষ্টের থেকে;—
কী ক’রে তাহার হল এমন দুশ্ছেদ্য অহঙ্কার
যা হয়েছে পৃথিবীতে— হয়তো তা হবে চির-দিন—
নগরীর তেজস্ক্রিয় ঘড়িগুলো যেই উত্থাপনে পায় ভয়
তাহারে করিতে চায় নিবিড় বাঙ্ময়
আসুক কর্কট, সিংহ, বৃশ্চিক, মকর, বৃষ, মীন
আমারও স্তিমিত চোখে রয়েছে তুষের অগ্নি: তিষ্যরক্ষিতা’র।
এক দিন আস্থা ছিল প্রাসাদের ঘড়ির ঘণ্টায়
যখন গভীর রাতে স্তব্ধ কক্ষে জমা হত দু’-চারটি লোক
সূর্যের নির্ঘণ্ট লয় পেয়ে গেলে ভয়ঙ্কর হাতুড়ির ঘায়ে
মনে হত সলিতার মুখে যেন চাখড়িকাঠির মতো মনস্বী আলোক
যেন কারু গ্রন্থিল স্পষ্ট হাতে ধৃত হয়ে ধীরে
আঁধার রাত্রির পথে লিখিছে অক্ষর
আমাদের চোখ স্থির— মেধা স্থিরতর
নিবিষ্ট কৃমির মতো ডুবে গেছি যেন অর্ধভুক্ত পনিরে
স্থির মেধা যেন— আরও স্থিততর চোখ।
সেই সব পুত্তলির দিন শেষ হয়ে গেছে তবু— বহু দিন—
হয়তো আবার ফিরে যেতে হবে— কে-বা জানে— অমেয় সৃজন
যখন সৃষ্টির পিঠ ন্যূব্জ কুর্মের মতো, আহা
পেট তার অন্তঃসত্ত্বা নারীর মতন সচেতন
কোথাও কি অবসর রয়ে গেছে অনন্ত সরলরেখা ধ’রে
অযুত আলোকবর্ষ তা হলে উঠিত হেসে করতালি দিয়ে
আজ তবু অগ্রসর ন্যূব্জতায় গড়িয়ে-গড়িয়ে
উপনিষদের শ্লোক ছেড়ে দিয়ে আচরণতত্ত্বকে টেনে নিয়ে ক্রোড়ে
হে আদিম ভূত, তুমি বৰ্জাইস অক্ষরে পাদটীকা কর সংগঠন।
সে-দিন আমার ঘরে অনেক গভীর রাতে আমি
মোহিত নারীর মতো গ্যাসের আলোর মুখে ব’সে
ভাবিতাম পৃথিবীর রক্তবীজ-কম্পনের থেকে
আবার উঠেছে ফুটে সব— রাজমুণ্ড-অঙ্কিত মুদ্রার দোষে
রথ টেনে— খনি খুঁড়ে— নারী গ্রন্থ ধান্যকে যূথবদ্ধ ক’রে
শুভ লাঞ্ছনের মতো শত্রুর কঙ্কালপর্ব দেয়ালে ঝুলিয়ে
কিংবা তারে জতুগৃহে শান্তির ভিতরে সঁপে দিয়ে
তবুও সাগরশিশু, আর দূর মৎস্যনারী: চাই নি কি ইহাদের ঋদ্ধি করজোড়ে
তবুও চেয়েছি আমি আমাকেই— উভচর গোধিকা’র মতন আপোশে।
ভাবিতে-ভাবিতে এই প্রতি তরু— প্রতি স্তম্ভ— দেউলের ভগ্ন অবশেষ
আমার চোখের কাছে বিম্বের মতো যেন উত্থাপিত হয়
দীর্ঘ আঙুলের মতো তারা উঠে গেছে অস্তমিত সূর্যের দিকে
তবু আমি মায়াবীর নিশাচর বিড়ালের মতন তন্ময়
পথনির্দেশ করি ইহাদের— অনন্য সূত্রের অনুবাদ—
পথনির্দেশ করি হৃদয়কে— অন্ধকার বাতাসের কূলে
যেন গম্ভীর সত্য চির-দিন হাসির তরঙ্গ খাবে পেঁচা’র গলার মতো ফুলে
হাসির তরঙ্গ শুধু;— গ্লাসের ভিতরে তবু নড়েছিল প্রশ্নের বিস্ময়
স্থির জলে— কী ক’রে মুখের ছবি নিবিড় চিত্রের জন্ম—
মূঢ়দের আঁধার উদরে পায় লয়।
Comments
Post a Comment