এইখানে শুয়ে আছি
এইখানে শুয়ে আছি— অন্ধকারে— পরথুপি ঘাসে
নিকটে নগরী থেকে গভীর আবেগ ধাবমান
ক্ষিপ্ত কুকুরের মতো নাক তুলে বৈশাখের দুরন্ত বাতাসে
স্মরণ করায়ে দেয়— পৃথিবীর আমূল সংস্থান
অশান্ত ঘর্মাক্ত ভিন্ন— সারা-দিন আগুনের মণ্ডলে ঘুরে
অস্থি হয়ে গেল সব, ধূমায়িত তার পর—
তোমার আমার গোঁফ যদিও যায় নি কিছু পুড়ে
এইখানে অন্য উন্মাদনা নেই— অন্তত আজ
যদিও সাপিনি তার ডিমকে জড়ায়ে শুয়ে রয়ে গেছে— তিন ধনু দূরে
সৈন্যেরা ঘণ্টার শব্দে ভোলে নাই একটি কাওয়াজ
ক্লাইভ স্ট্রিট’এ— ফোর্ট’এ— বেলুড়’এ—
তবুও ঘড়িতে যেন তেল নেই— যদিও বেজেছে চ’লে ঠিক
ছবির বইতে লুপ্ত নগরীর মতো অমায়িক
এখন দেখায় তারে এই অববাহিকার থেকে
তবু বেশি দূর নয়— মেট্রো ফার্পো লিপ্টনের আলো
এক মাইল এঁদো বাড়ি স’রে গেলে দেখা যেতে পারে
কিংবা আরও বড়ো-বড়ো প্রতিষ্ঠান— মৌন— জমকালো
সুদূর সমুদ্র থেকে প্রত্যাগত পাখিদের তরে
এ-সব প্রাসাদ যেন বার হল রাত্রির সফরে।
দানবী নারীর মতো ঘুমন্ত নগরে অব্যাহতি
অতিকায় বাতাসের প্রতিধ্বনিময়
সূর্যে লুটেছে খনি সারাদিন
অন্ধকারে পারি দিতে হয়
আমি জানি বৈশাখের রাত্রির ধীমান বাতাসে
কালো সাগরের থেকে কর্মোরেন্ট-ভিড় উড়ে আসে।
স্কাইস্ক্রেপারের মতো বিলোল প্রদেশ
তুলির জলের রঙে আঁকা এই মগ্ন আকাশের স্যন্ন নক্ষত্রের নিচে
কোনও দাবি করে যদি পেশ
তা হলে তা মিছে
বিরাট গম্বুজ যদি মাংসের মতো হয়— মিছে হেরফের
মিছে প্রতিরোধ করো ক্ষুধার্ত বর্তুল পাখিদের
কিন্তু সেই বৈশাখের রাত কবে— আজ?
বৃশ্চিকের মতো এই কানসোনা ঘাস।
প্রশ্নোত্তরে এক-মত হতে সময় হারাতে সব মানুষ নারাজ
দেয়ালের ধূমা নটী দৈববল নিয়ে তারা এখন উদাস
সমস্ত দিনের কাজ শেষ হলে বেলোয়ারি যাচ্ঞা যায় হেজে
বিড়াল তৃপ্তি পায় আঁধারের জাদুবলে চিতাবাঘ সেজে।
সংকীর্তন শুরু হল মাইলের-পর-মাইল উপবৃত্তাকার
সাঙ্গ হোক-না-ই-হোক আপেক্ষিক সময়ের মীন
আজও জানে নিউটনি তরঙ্গের শেষ
হবে না ক’— আর কোনও দিন
নক্ষত্রের আলো ঘুরে, পুনরায় শৈশবে, চেয়ে দেখে ফিরেছে স্থবির
গভীরকে ডেকে যায় অন্ধকার সমুদ্রের ভিতরের
বিপরীত কোনও-কোনও আর-এক গভীর
অনেক কঙ্কালসার জোচ্চোর শাসায়ে সারা-দিন
যতখানি ঘৃণা হল, তার চেয়ে বেশি হল সম্পত্তি অর্জন
মানী মানে এই কথা। মন তার বলিদ্বীপনৃত্যের অধীন
সমর্থন ক’রে তারে সকল সময়সত্তা দিতেছে লবণ
কারণ সে লক্ষবাহু, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে প্রতীকের মতো তার নাম
এত ভালো— পেতে পারে যেন তার পিতারও প্রণাম।
সূর্যের আলোয় আছে আমাদের বিখ্যাত আমোদ
যখন সে পাঁচ হাত দীর্ঘ দেহে উপস্থিত হয়ে
আমাদের জীর্ণ মুকুরের পিছে ঘ’ষে যায় আবার পারদ
ধূর্ত অভিসারিকার মতো প্রতিটি জীবনকে ল’য়ে
এত বেশি অমায়িক— মনে হয় দুষ্ট কোনও ছেলে নিঃসংশয়
সাঁটায়ে তাহার গালে চড় দিলে দু’এ আর দু’এ চার হয়।
কারণ, দু’ গাল তার নিবিড় রসাল।
সব-চেয়ে নিম্নতম পরিচয়ে চোরাই রাজপথে সে জন্তুটিকে হাতে নিয়ে ঘোরে
মৃত্যুতে বিশ্বাসী নয় তাহার তক্ষণশীল মন
খোলার বারিক দিয়ে বরং পৃথিবী দেবে ভ’রে
দারা-পুত্র-পরিবার পায় যাতে সুখ
মন্থর মৃত্যুর স্বাদে— সাহসিকা তপস্বী-মাছের মতো নিরপেক্ষ দাড়ির কৌতুক৷
জীবনের পথে মানুষটা কাছে চ’লে আসে— মাইল-মাইল পথ
নিরুদ্দেশে উড়ে যায় শুক্ল বাতাসে
মানুষকে আবিষ্কার করে তবু— দর্জির ছাঁটা লংক্লথ
তরল সহায় ছুঁয়ে কে আর এ-পৃথিবীতে ফিরে যাবে আরও বেশি দুরূহ হুতাশে
মুকুরে ফলিত দেখে আপনার লন্ডভণ্ড জীবনের বীজ
অফিস-ফের্তা তাই— অতএব— ভালো ক’রে দেখে নেয় বৈদর্ভী শেমিজ
দেখে নেয়। বেলুনের মতো তা কি উড়ে যায় কোনও এক বিশ্রুত দেশে
সেইখানে পরাহত এডিংটন জীনসের কল্পিত সীমানার মান—
উটের চামড়া তবু জুতো বানাবার কাজে এসে
আবার কি চায় সেই ভ্রাম্যমাণ জন্তর প্রাণ
বৃহস্পতি স্বাতী সেই সমুজ্জ্বল নক্ষত্রের রাতে
মানুষকে শিশ্নোদর ব’লে জানে যাহারা নাভিশ্বাসে নিজেদের চেয়েছে মানাতে।
আমরাও সংরক্ত রূপে নিজেদের চেয়েছি জানাতে
নিসর্গের কাছে গিয়ে— কোনও এক স্ফটিকের সূর্যকে নিয়ে
ইন্দ্রধনুবীজ বুনে কঙ্কালের দেশে ব’সে— চেয়েছি বানাতে
উচ্চতর বাস্তবতা;— আত্মারাম সরকার যেইখানে মিথ্যা চালিয়ে
যেতেছিল দিন-রাত— আমাদের নিজেদের দর্শনে ছিল না ক’ ততটা সংশয়
কেননা সৈকতে ধরা প’ড়ে গেলে চিতল কি সমাদিষ্ট মৎস্যনারী নয়?
অথবা বরুণ হয়? আমাদের সকল সুশিক্ষা তবু ছেড়ে দিতে পারি
আমাদের সব স্বপ্ন— প্রকৃতির অপরোক্ষ জ্ঞান
অথবা ব্রহ্মাণ্ডে হাত রেখে তার টের পাওয়া গিয়েছিল যতটুকু নাড়ি
অথবা মোমের পাশে বই রেখে যেই সব দেবী পরি জিনের সম্মান
পেয়ে গেছি— নৃমুণ্ডের বর্বরতা-বিক্ষু্ব্ধ আজ এই কঠিন রূপক থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল বায়ুর ভিতরে
ছেড়ে দিতে পারি সব— সুতো কেটে গেছে ব’লে— অরুন্তুদ গ্রন্থির তরে।
যেমন অদ্ভুত ভোরে বয়স্ক মানুষ মনে ভালো ক’রে জানে
নানা মাঠে সঞ্চরণশীল এই তাহার পায়ের শব্দ আর
কিছু নয়;— প্রকৃতিও চিনে নেয় অঙ্গুরীয় নিতান্ত নিজের অভিজ্ঞানে
অনেক মুর্গির কণ্ঠে যখন অনেক চেষ্টা, কত মর্মী আমাদের আন্তরিকতার
হিসেবে সমূহ ভুল হয়ে গেছে, পক্ষীরাজ পেয়েছে ভয়—
বিমথিত: আমিও করি না অভিযোগ
এখন ঈশান কোণ নেমে এলে— ম’রে গেলে চণ্ডাশোক, ধার্মিক অশোক।
Comments
Post a Comment