গাছের নীরব পাতা

গাছের নীরব পাতা এই বার অতীতের উই’এ-কাটা ইতিহাস হয়ে
মৃত বছরের সাদা সেতু বেয়ে চ’লে যাবে— দিতেছে নির্জন অঙ্গীকার
বহুপ্রসবিনী সব দৃঢ়মেধা জননীর মতো যেন এইখানে শীতের বিকালে
দাঁড়ায়ে রয়েছে ঢের উঁচু-উঁচু হরিতকী, শিশু, জাম নদীর এ-পারে
সূর্য যেন কেশবতী কন্যার হাতে মোম— স্বর্ণ ডিম— এখুনি আঁধারে
ডুবে যাবে— তবু তার দীপ ধীরে জ্বলিতেছে আমলকী ডালে
পেয়ারা’র বিস্তারিত হাড়গোড় ভ’রে ওঠে সোনার কঙ্কালে
এই সূর্য, মনে হয়, অনাদির আদিম ধীমান
যুবা আজও— বিকোষিত চোখ তুলে চেয়ে দেখে অরণ্যের প্রাচীন গরিমা
সন্ন্যাসিনীদের মুণ্ড চেয়ে দেখে অরণ্যের গাছে ঘেরা— জীবনে এ-বার তারা হারায়েছে পৃথিবীর প্রথম বয়স
কুয়াশার চাদরের ঢাকনায়; তাহাদের শব্দহীন সঙ্ঘারাম ঘিরে
বিলাসী জন্তুর মতো মনে হয় চিলের বাদামি রমণীরে
মনে হয় যেন কোন বিজাতীয় দূর সম্রাটের
বিরাট জাহাজ ভরা সোনার শস্যের মতো পশ্চিমের আকাশের সীমা
অরণ্য কঙ্কাল— তবু শীতের অমোঘ স্বাদ পেয়েছিল টের

মানুষেরও হৃদয়ে কঙ্কাল আছে— সূর্য তাই আমাকে নিয়েছে ডেকে চুম্বকের ভিড়ে
ভারতীয় সম্রাটের সৈনিকেরা যখন চলিয়া গেছে ঘুমের শিবিরে
তখন প্রতিভা আসে জ্ঞানী আর প্রণয়ীর নির্জন ধাতুর মতো মনে
লাঙ্গল চষিয়া গেছে— গোলাজাত শস্য আর কিছু নয়—
ইতস্তত দু’টো গোরু— ছিন্ন খড়— কালো-কালো আশ্চর্য রেখার সম্মোহনে
প’ড়ে আছে। —যত দূর ভৌতিক দৃকপাত চ’লে যায় মাঠের ফাটল।
আকাশের মাঝপথে বকের কাঁচির মতো ঠোঁট থেকে মুক্তি পেয়ে কুয়াশার বল
লুফে নিল পরিশেষে আপনাকে; কোনও এক মুণ্ডু হয়ে চেয়ে থাকে;
বিষয়ের ডিম ফেটে ভেঙে গেলে কোথায় মায়াবী আছে আবার করিবে সংযোগ

আসিছে শীতের রাত, (গভীর শীতের রাত), লেগেছে গোরু’র মুণ্ডে শীতের পরশ
যেতেছে বরফ হয়ে পেঁচা’র ক্বাথের মতো মৃদু চোখ
মানুষের মতো প্রতিভা নিয়ে বেঁচে থাকিবার হাতযশ
রাত্রির অসংখ্য শ্মশান ঘিরে সঙ্ঘমিত্রা’দের মতো জোনাকি’র মুমুক্ষু আগুন
জাহাজের মতো যেন তীরে এসে লাগে চুপে— পাঠায়ে দিয়েছে তারে ধার্মিক অশোক:
সমবেত সদ্যমৃতদের হাড় তাড়াতাড়ি হয়ে যাক চুন
যারা সব বেঁচে আছে তাড়াতাড়ি তাহাদের ববিনের সুতো শেষ হোক।
(অস্তমুখ সূর্যকে পরিচিত রূপময়ী দানবীর মতো মনে হয়
মাঠের ঢিবির পারে শরীরের দীর্ঘ যষ্ঠি নিয়ে
মৃত ইতিহাস থেকে উঠে এসে একাকী গাভী’র পাশে রয়েছে দাঁড়িয়ে)
তবুও এখনও সূর্য জয় ক’রে নিচ্ছে ধীরে— নিঃসংশয়ে— পৃথিবীর আহত সংস্থান
সমীচীন কুরুরমণীর মতো না ক’ তার— শঙ্খের মতন তার কান
অপার্থিব ঘাড় তার মৃদু নত— খাদ্যহীন অনন্ত মাঠের দিকে যত দূর করিছে ইশারা
কিছু আর পাওয়া যায় না ক’ তুমি, আমি, তুমি, অনন্ত তোমরা আর আমাদের
মদির গন্ধ ও মৃত্যুর ওজস্বী স্বপ্ন ছাড়া

আমাদের বৈঠকের মানচিত্র ব্যর্থ হয়— আমাদের জলের গেলাসে যেই বৈতরণী নদী
কালো-কালো মাছ নিয়ে গিয়েছে সাঁতার কেটে— আমরাও সেই সব ধৃষ্ট বুদ্বুদের মতো যদি
মিশে যাই— তবু এই মাটি, ঘাস, পাখি, জল— ইঁদুরের দাঁতে-কাটা মানুষেরও ইতিহাস-রেখা
সূর্যের গোমেদ-রঙে নির্ভুল ময়ূর নিয়ে চকিত ছাদের মতো দিয়ে যায় দেখা।

আসিছে শীতের রাত, (গভীর শীতের রাত), লেগেছে গোরু’র মুণ্ডে শীতের পরশ
যেতেছে বরফ হয়ে পেঁচা’র ক্বাথের মতো মৃদু চোখ
মানুষের মতো প্রতিভা নিয়ে বেঁচে থাকিবার হাতযশ
রাত্রির অসংখ্য শ্মশান ঘিরে সঙ্ঘমিত্রা’দের মতো জোনাকি’র মুমুক্ষু আগুন
জাহাজের মতো যেন তীরে এসে লাগে চুপে— পাঠায়ে দিয়েছে তারে ধার্মিক অশোক:
সমবেত সদ্যমৃতদের হাড় তাড়াতাড়ি হয়ে যাক চুন
যারা সব বেঁচে আছে তাড়াতাড়ি তাহাদের ববিনের সুতো শেষ হোক।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা