এই চেতনা
হলুদ কমলা ধূসর, মেঘের ফাঁক দিয়ে
কিরণের সব বর্শাফলক দীর্ঘ ছন্দে উঠে
উপরের নীল আকাশের দিকে নির্জনতার মতো
চ’লে গেছে— আর বাকি সব সাদা সূর্যরশ্মি পৃথিবীর
চোরা গলি ভাঙা দরদালানের দিকে
শুভ্র সুসমাচারের মতন— পৃথিবীর নরনারী নগরীর
নিরুদ্দেশের সীমানায় ঠেকে স্থির হয়ে আছে— দেখ।
এখন বিকেল— গাঁ শহর নটী বণিক ভিখিরী পলিটিশ্যানরা সব
ক্রমেই অধিক স্তিমিত সুরের ধূসর পৃথিবী বেয়ে
নিভু-নিভু শেষ রোদের কিনারে ত্রস্ত মাছির মতো
দেখে আলো নেই— জীবমৃত্যুর তবে অন্তিমযুগ?
(চেয়ে দেখে আলো নিভে যায় যেন হেমন্ত-ব্ল্যাকআউটে)
প্রান্তর থেকে নগরের থেকে জীবনের থেকে সবই
ঢেরদিনকার অনাদায়ী তহশিলের মতন শূন্যে কেঁপে
সূর্যের সাথে হারিয়ে যেতেছে কোথায় কামাতলান্তে।
আরও এক দিন কেটে গেল তবে অনুপম মৃগতৃষ্ণার
মতন সূর্যকিরণ জ্বালায়ে সমাজ-জাতির চোখে।
দিনভোর সব বড়ো বেবিলন আমাদের সিঁড়ি বেয়ে
নকশি উল্কি নারী ভালোবেসে, আত্মবিচারে ধীরে
অলিভের বনে আথেন্স দেখেছে— সূর্যের আগে অণু—
সূর্যের মতো উপনিষদের শীত আলো
ভালো ক’রে পেতে-না-পেতেই রোম— দ্বিতীয় সূর্য নিজে
শাসন করেছে— যুদ্ধ করেছে— আমরা যুদ্ধ করি,
সুশাসন করি গণনাবিহীন রক্তনদীর পারে
নকল সূর্যে শুক্ল সুপথে পতিত অন্ধকারে।
জানি না প্রাণের সূর্য কোথায়।
আজকে এখন দিন, শতাব্দী পৃথিবী সৃষ্টি চুপে
বিকালের আলো নেভাতেছে; শত নগরীর ভবনের
সিঁড়ির অপার গোলকধাঁধায় মৃত-জীবিতেরা মিলে
প্রকৃতি প্রণয় সমাজ পৃথিবী জীবনের মানে খুঁজে
খাঁচার ভিতরে অনেক রঙিন পাখির মতন— কেমন সন্দীপনী!
যার যার দ্বৈপ আত্মা মুক্ত ক’রে দিয়ে
আত্মঘাতী নেশনের ক্লান্তি লয় ক’রে
দিতে চায়; প্রেম ও হৃদয় জ্ঞানবিনিময় রয়েছে তাদের;
আলো চায়— অনাদি অনন্ত সূর্য খোঁজে।
সাহিত্যপত্র । কার্তিক ১৩৫৫
Comments
Post a Comment