নদী
বালক-কালের সেই নির্দোষ অসমীচীন দিনগুলো থেকে
এখন আয়ুর পথে ঢের দূরে চ’লে এসে তবুও হৃদয়
সহসা নদীকে আজও স্মরণীয় মনে করে উলুখড়ে শরে
নেউল-ধূসর জলে— কিন্তু তবু অপরূপ প্রতিভায় জলে
সর্বদাই কীর্ণ হয়ে রয়ে গেছে ব’লে;— অই দিকে ভাগীরথী
কিছুটা উৎক্ষিপ্ত হয়ে এই দিকে পদ্মা— জলসিড়ি— শঙ্খসারি
চ’লে গেছে দক্ষিণের সমুদ্রের দিকে
অধিক ঘনিষ্ঠতর দুর্দশার পাশ দিয়ে তবুও এ-দিকে
কাঁচের গেলাসে জল ভেঙে ফেলে হয়তো-বা অভিভূত হয়ে
মানুষের পৃথিবীর আনকোরা কঙ্কালের স্তূপ
হয়ে যেত— এই তার অন্তিমের কথা হত ভোরের ধবল রোদে ঘুরে
স্বাতী-তারকার সূচে জ্ব’লে উঠে অন্ধকার রাতে
তবুও সে জলের গ্লবিউল নিয়ে নদী হয়ে গেল
মৃত বিড়ালের মাংস পান ক’রে তবুও তাহার লোম
বিড়ালের পশমের মতো মৃদু— চেয়ে দেখ চোখ
বিড়ালাক্ষ মণির জননী— এইখানে প্রথম বিড়াল
জন্মেছিল এক দিন— প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল
অপরূপ বিড়ালের জন্ম হবে— নদীকে ব্যাহত ক’রে তারা
তবুও গিয়েছে চ’লে— দুর্গন্ধমদির মাংসে বিড়ালের ভিড়
ফেঁসে যায়— মানুষের সন্তানেরা বিগলিত হয়
কাদা ও কৃমির পথে— নদী তবু সর্বদাই কীর্ণ হয়ে থাকে
জলের অক্ষর নিয়ে মানুষের মূক বর্স্টল
মুখের ছায়ার চেয়ে— এক বার ন্যূব্জ কালভার্ট
সৃষ্টি করে— কেরোসিন, ক্রেন, রক্ত, মহৎ বৃহত্তর সেতু
গেঁথে দেয়,— জাহাজের মহার্ঘ চাকার ব্যবহারে
নদীর হৃদয় স্পর্শ করে গিয়ে— কামাতুর জল
তবুও মহানুভব জলের ঝঙ্কারে চুপে প্রবাহিত হয়ে
অর্গ্যাজম অনুভব ক’রে যায়— মানুষের সাথে
ক্ষীণ পরিণয় তার গণিকার মতো— তবে—
তবু সে রূপোপজীবিনী কোন দিন?
দুপুরে গর্দভ আসে ধূসর রোমের ব্যবহারে
নিজের মুখের কোনও বিম্ব নয়— জলের সুঘ্রাণ
চিনে নিতে— ঘড়ির সময় ভুলে গিয়ে অকপটে
গর্দভের রজকিনি, তিত্তিরাজ-গাছের শাখায়
বসন্তবউরি দু’টো হা-হা ক’রে হাসে
জলের পায়রাগুলো ভ্রষ্ট হয়ে এ-পারের থেকে
তবুও জলের দিকে চ’লে যায়— মৌন ডানাময়
ইঁদুরের মতো হিম খুদের ভিতর থেকে উঠে
পথের নালের মতো ঠ্যাং— দুই ঠ্যাং
নীরবে ডুবায়ে ফেলে জলপিপি সময়ের ঘড়ি
সৃষ্টি করে— পুনরায় সময়ের ঘড়ি ভেঙে ফেলে
সর্বদা কালের ঘড়ি ভেঙে ফেলে এরা
সমান্তরালে চ’লে নিরুত্তেজ মানুষের সাথে
(লোহা’র খড়ম পায়ে) নদীর উপর দিয়ে হেঁটে যায় সবে
নদীর ভিতর দিয়ে নরকের পথে
নেমে যায়— নদীর উদর দিয়ে যায়
পিতৃলোক-লোকান্তরে—
যেইখানে দরায়ুস জৈমিনি জেঙ্গিস
রাধাকৃষ্ণের সাথে ব’সে আছে চায়ের টেবিলে
অথবা সিদ্ধার্থ আছে এডোয়ার্ড লিয়রের সাথে
উড়খুড়খুড়ি খুড়িখুড়ি হয়ে তাই নীচে নদী
প্রবাহিত হয়ে ওঠে ভোরবেলা— স্পর্শাতুর— তবুও তাহাকে
বিবিধ নিয়মে ঢেলে কে কবে ছুঁয়েছে কোন দিন।
Comments
Post a Comment