রাত অনেক

রাত অনেক
রাত অত্যন্ত শীত
এ-শহরের নাম জানি না
আমাদের সময় পরিভ্রমণের পথে
এ-রকম শহর দেখেছি ঢের— দেখে থাকব
‘যা হয়েছে— যা হচ্ছে— হবে— সবের পিঙ্গল ছায়া আমাদের মনের ভিতরে
কিন্তু তবুও এখন পর্যন্ত আমরা দমে যাই নি’—
এক জন চীনে— এক নিগ্রো— এক জন আর্যাবর্তের— আর এক জন উজবেগ
প্রতিপদেই বুঝতে পারছি: পৃথিবীর নিঃসহায়তার আমরা প্রতীক
অথচ পৃথিবীর এ-শতাব্দী সহায়হীন নয়
তরতাজা নদীকে আমরা ঘোলাটে ক’রে চলেছি

রাত অত্যন্ত শীত
গ্যাস-ল্যাম্পের পাশে-পাশে উজবেগ ভিখিরির দাড়ি বরফের কুচি-কণিকায়
লম্পটের দাঁতের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল
অথচ সে লম্পট নয়
আমরা কেউ-ই লম্পট নই। কড়ি নেই ব’লেই নয়;
আজ কড়ি নেই ব’লেই।
(নিজেদের গলা-খাঁকারি শুনলে জনতাকে আমরা ভয় করি)
এই চীনে— নিগ্রো— হিন্দুস্থানি ও উজবেগ
এরা এদের নিজেদের স্তরের জীব

অকুণ্ঠিত হাতে ট্যাক্স দিয়ে পার্শি সব মেম গ্যাসের আলোয় নেমে আসে
প্রশস্ত রাস্তার উপর দিয়ে শিখ-ব্যবসায়ী ডবল-ডেকার চালিয়ে যায়
নির্মল বিবেকে ছেলে ও মহিলাটি রেস্তরাঁতে কফি খায়
তারা তাদের স্তরের জীব
কেউ কিছু উসকাবার খাতিরে এসে
কিংবা ওদের ঠাট্টা করবে ব’লেই
আমাদের শুনিয়ে-শুনিয়ে বলে।

কী বলে কে তার তাৎপর্য অনুভব করে
(চীনে নয়— নিগ্রো নয়— উজবেগ ভিখিরি নয়)
‘গভীর রাতে প্রশস্ত নগরীর পথ দিয়ে চলেছি
অদ্ভুত গ্যাসের আলোর করুণার ভিতর দিয়ে
পিপাসা পেলে হাইড্রান্ট খুলবার মোক্ষম আমোদ
যে-কোনও কারু কাছে হাত পাতবার জন্য হলদে, কালো, বাদামি হাতের
জাজ্বল্যমান সামুদ্রিক রেখা
আর সব নির্বাণপ্রাপ্ত’
কেউ কিছু উসকাবার খাতিরে এসে
কিংবা ওদের ঠাট্টা করবে ব’লেই
আমাদের শুনিয়ে-শুনিয়ে বলে।
(কী বলে কে তার তাৎপর্য অনুভব করে)
কাল ভোরে আবার যখন সূর্য উঠবে
জলের দাম হবে হয়তো রক্তের চেয়ে বেশি
আজও রক্তের কোনও দাম নেই, মৃত্যুর কোনও ফিরিস্তি নেই
নতুন মৃত্যুকে আয়ত্ত করতে গিয়ে এই মৃত্যু
(এখনও) (নিজেকে) তেমন আমূল কলঙ্কিত নয়।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা