জীবনের ঢের দিন কেটে গেছে

জীবনের ঢের দিন কেটে গেছে— প্রমূর্ত কুকুর এসে বলে,—
বিষয়ের পিছে তুমি ধাবন করেছ ঢের রুষ্ট রাজহংসের মতন
ঢেউয়ের গম্বুজ গুঁড়ো ক’রে সাদা মোমের ফেনার মতো জলে আত্মাকে করেছ প্রত্যর্পণ
সেই দিন; উড্ডীন ঘোড়ার পিঠে নিজের কালেও তবু অশ্বারোহী হলে
সে-দিনও মানাত— তবু আজ তুমি সাড়ে-তিন হাত
কোথায় রয়েছে হংস যাহার ডানাকে তুমি প্রমত্ত আনন্দে ঘুরে করিবে আঘাত?

সেই দিন সরিষার বিম্বেও পাওয়া যেত ঘূর্ণমান ভূত
ধবল নিথর ভূত অন্ধকার বায়ুর ভিতর থেকে উত্থিত হয়ে
তোমার মোমের পাশে বিছানার সন্নিকটে দাঁড়াত বিনয়ে
অগ্নির ডিমের মতো স্বর্গ, মর্ত, রসাতল ঘুরিত নিখুঁত
তোমার চোখের পাকে গোল হয়ে— গোল হয়ে ঘুরে
এই সব অমানব খেলা খেলে, হে স্ফটিক, একটি ভুরুর-রোমও সেই দিন যায় নি ক’ পুড়ে

আজ তবু হাত যেন ক্ষিপ্রতর হয়ে গেল— পাখির ঠ্যাঙের মতো হয়ে গেছে ব’লে
চোখ আজ মায়াবীর নিশাচর বিড়ালের; ফিরোজা গোলাপি গাঢ় মোম।
সূর্যের সোনালি বিম্বে বীজাণুর ছায়াছবি— অথবা শিল্পীর সাথে দানবীর গূঢ় সঙ্গম
আমারই কানের কাছে ভারতীয় রাগিণীর দীপকের মতো ওঠে জ্ব’লে
তবুও সে-সব আজ চাঁদের ও-পিঠে অন্ধ মহাভূতদের হাতে দিয়ে
জীবনকে নিতে হবে চাখড়ির যুক্তির মতন শুকিয়ে

এখন বয়স ক্ৰমে মাইলের-পর-মাইল বরফের দিকে চ’লে যায়
চারি-দিকে কুমেরু’র সংগঠন— শীতল বয়স্ক হাসি— গ্লাসিয়ার-বিভা
প্রসিদ্ধ চায়ের বাটি এ-সময়— কেটলি’র কঠিন প্রতিভা
হয়তো-বা আমলকী করধৃত হবে না ক’— ক্ষিপ্র হাত চির-দিন সে-সব হারায়
তবু তাহা স্থিরতর হয়ে যাক— স্থিরতর হোক মেধা— স্থিরতর হয়ে যাক চোখ
যেমন সমুদ্র-পাখি উড়ে গেলে ঢের প’ড়ে থাকে উড়ন্ত পাখার নির্ভুল, আমিষ পালক।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা