আমাদের চোখের সম্মুখে

থেকে-থেকে আমাদের চোখের সম্মুখে এসে নতুন সৈকত
দেখা দেয়— সর্বদাই আমাদের কানে তবু নিরন্তর জল
শব্দ তুলে ডেকে নিয়ে চ’লে যায়—
যেইখানে সমুদ্রের উড়ুক্কু মাছের দৃষ্টিপথে
সমুদ্রেরা হয়ে গেছে আলোড়িত পারদের মতন উজ্জ্বল

চেয়ে দেখি— ডান দিকে অসম্ভব নেগ্রিটো বালির
মরুভূমি প’ড়ে আছে; একটি শকুন এসে একটি খেজুরগাছ করে সংশোধন
মনে হয় শেষ মানুষের মৃত্যু হয়ে গেছে অমেয়, নির্জন সূর্যে
গভীর ঘুমের গন্ধে ভ’রে ওঠে আমাদের মন

ভ’রে ওঠে;—
মনীষী কি অবশেষে ম’রে— প’ড়ে হয়ে গেছে বিগলিত ফলের মতন
ঢের দিন বেঁচে থেকে? তাহার শবের থেকে নীল এক আলো
মানুষ প্রণয়ে যাহা ভালোবাসে— মানুষ ঘুমালে যাহা ভালোবাসে
তেমন খেজুরগাছ, শকুন ও বিকেলের নীলিমা বানালো?

আমরা তা হলে ভূত— চর্মব্যবহারী এক দালালের সাথে
কবেকার সৈকতের থেকে তার জাহাজকে ভালোবেসে ফেলে
চলেছি নিবিড় জলে— সর্বদাই নেপথ্যের দিকে
হুকুম রয়েছে এক মনিবের— গলতি কী চালানির পচা মাল পেলে

আগ্রহে তাদের কোলে তুলে নেবে— তুমি আর তুমি—
বোম্বাইয়ের সৈকতের থেকে শূন্য আলেপ্পো’র সমুদ্রের দিকে
আরও দূরে শূন্যতায়—
সময়ঘড়ির সাথে সস্নেহে বাজায়ে নিয়ে যব দেবে তাহাদের তুমি
যব দেবে— হৃদয়ের;—
যেমন প্রেমিক দেয় দেয়ালের পার থেকে পরের পাখিকে।

ঠিক বটে। আমাদের চুলে সারা-দিন তার হাত অকৃত্রিম— থাক হাত
ভেড়া’র স্তনের থেকে ঈষৎ ক্ষরিত ম্লান দুধের মতন
আমাদের ছায়া দিয়ে— ছায়ার মতন কথা দিয়ে
মনে হয় যেন তার র’য়ে গেছে উত্তম, অব্যর্থ প্রয়োজন
(সোজা, স্বাভাবিক) ছুরির মতন

রয়েছে সমুদ্র, সূর্য আমাদের অবিরল বুনুনির সাথে
ডান দিকে বিবর্ণ বালির ঐ মরুভূমি— ফাঁপা গাছ— শকুন’কে তারা
আমাদের মতো চোখে দেখে ফেলে কত ধানে কতখানি চাল হয় জেনে
বিচূর্ণ কাঁচের মতো সমুজ্জ্বল গুঞ্জরণে হাসির ফোয়ারা

খুলে ফেলে;— আমরা কি মৃত তবে— হাতুড়ি’র মতো অন্ধ বোবা ও বধির?
সিন্ধুশামুকের মতো ঢুলে—
জাহাজের ভিজে কাঠে চুমো খায় এসে
মানুষের আয়ুরেখা শেষ ক’রে ধূসর ইঁদুর তারা চ’লে যায় ক্রমে
ভূতের মতন সাদা জাহাজের দড়ি, ফেনা, সূর্য ভালোবেসে।

আমরা তো মৃত নই— জীবিতও নই তবে— জীবনের-ভিতরে-মরণ
আমরা এ-কয় জন;— পৃথিবীর সব মুমূর্ষুরা যেন অন্ধকারে ব’সে
লম্পট, গরিলা, নিগ্রো, চীনেবাড়ি, জাভা’র চুরুট—
এ-সব জুসের থেকে নীলাভ ডানার সব মাছির মতন মুদ্রাদোষে

আমাদের উড়ে যেতে দেখেছিল— ভোরবেলা— সূর্যের পানে
আমাদের উড়ে যেতে দিয়েছিল— তাহাদের প্রতীকের মতো
জেগে উঠে চেয়ে দেখি তাহাদের মোটা পিঠ সূর্যকে ঢেকে
লেজের মতন যেন কুকুর’কে ঘুরায় ফলত

বেড়াল, দালাল, শনি, অধ্যাপক, খরগোশ, কিন্নরীর ভিড়
হেসে ওঠে তুড়ি দিয়ে: তম্বুরার শব্দে তুমি জেগে ওঠ নব-নব ভোরে।
হাবসি রমণী গায় সূর্যের দিকে চেয়ে, শোনো—
যদিও দু’ চোখ তার আমি আর আমি আর আমি ছিঁড়ে ফেলেছি নখরে।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা