কেরানিরা

আমি দেখেছি তাদের
কেরানিরা
শীতের দুপুরবেলা— অন্ধকার গলগোথা যেন— অফিসের অন্ধকারে
ফাইল ঝাড়ে
মৃত পাখিদের পালকের মতো পৃথিবীর বিস্মিত যুগের
মৃত পাখিদের কিউরিয়ো যেন
এই ফাইলগুলো
কিম্বা এই ফাইলের কেরানিরা

কবে যে তাদের জন্ম হয়েছিল?
কোনখানে বেড়েছিল?
জীবনেরে কোন ভাবে দেখেছিল?
ফেনা নদী মেঘ ঘাস ঝিনুক গুগলি বাঁশ
বাবলার ঘ্রাণ মাঠের সোনার ঘর
ভালোবেসেছিল?

তবু কেন মাঠ ছেড়ে চ’লে গেল এরা?
দুপুরের দীর্ঘ ঘাস ধান বাতাসে-বাতাসে শব্দ করে অবিরল
বটের পাতার ‘পরে শুয়ে তারা একদিন শুনেছিল সেই সব
তারপর ভুলে গেছে
বিস্মৃত আকাশ তবু শোনে

গত বছরের খড় জড়ো ক’রে মাঠের শালিখ নীড় গড়ে এইখানে
হলুদ খড়ের নীড়
বিবর্ণ খড়ের
আরও দূরে— অপরাহ্ণে— নীরব ধানের গোছা তুলে
দু’টো ডিম দেখা যায়
ধানের সম্পূর্ণ ছড়া নুয়ে প’ড়ে তাহাদের ঢেকে ফেলে

পৃথিবীর সব স্বাদ— সব স্বপ্ন— সব ছবি— সফলতা— অভিজ্ঞতা এইখানে

খেত মাঠ নদী যোনি রোদ মেঘ শিশিরে আকাশে
এখানে শৈশব আর মরে না ক’
ব্যথা দিতে ভুলে যায় স্মৃতি
ভালোবাসা ভালো বাসা এর কে
খড়ের ভিতর থেকে যেই পাখি ভোরে উড়ে চ’লে যায়— রাতে ফিরে আসে
তার মতো
ইহাদের ভুলে কারা চ’লে গেছে? গিয়েছে কোথায়?

তাদের জীবনে কোনও প্রেম নাই— জীবনের বীজ আছে শুধু
তাহাদের নিদারুণ সতর্কতা আছে
নিরুপম ভয়
জীবনের বিস্মৃত বিস্ময়
মুছে দেয় তারা

আমি তাহাদের অন্ধকার অফিস দেখেছি
মুখের অশ্রুত কথা শুনিয়াছি
জীবনের অন্য এক মানে দেয় তারা
নবাল মেঘের থেকে— রোদের ফেনার থেকে
ফাইল ড্রাফট যেন আরও সোনা, আরও ঢের সফলতা
কেরানিরা।

Comments

সর্বাধিক পঠিত কবিতা

যত দূর চোখ যায়

তবুও সে আসবে না আর

এইখানে প্যাকাটির মতো

আকাশের চাঁদ

যাত্রী

পটভূমি

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র

রবীন্দ্রনাথ

পটভূমির ভিতরে গিয়ে

নারীসবিতা