ঘোষদের মণ্ডপে
ঘোষদের মণ্ডপে কি আছ তুমি ব’সে
এই রাতে? আর আমি উনুনের পাশে
মনে হয় ভিজিতেছ যেন এই অঘ্রানের ওশে
খড়ম হারায়ে গেছে— হাঁটিতেছ খালি পায়ে ঘাসে
হাঁটিতেছ— হাঁটিতেছ— আজ এই অঘ্রান জ্যোৎস্নায়
সর্ষেখেতের কাছে ঐ কার গলার খাঁকারি
এতটুকু তেলে এত মাছ ভাজা— এ যে কী গো দায়
উনুনের এত ধোঁয়া বলো তুমি সামলাতে পারি
কতগুলো ভিজে চলা ভিজে পাতা করেছি জোগাড়
আগুনেও শুকায় না— একটুও ধরে না আগুন
ও গো তুমি— না, না, তুমি কে আমার— কী-বা ধারো ধার
তুমি বেশ চ’লে গেলে… কতখানি দেওয়া যায় নুন
ঐ যা, আঁচল যেত এক্ষুনি ধক ক’রে পুড়ে
পুড়িবার ভয় নাই— বিধবারা সব হয় বুড়ি
ভাসুরের বড়াগুলো হওয়া চাই খুব মুড়মুড়ে
তা না হলে বড়দিদি গাল দেবে, ‘অ্যা লা মুখপুড়ি!’
কত-বা বয়েস ছিল তোমার গো— সবে তো তিরিশ—
তিরিশে কি মরে কেউ?— আড়ি ক’রে চ’লে গেছ বুঝি
বড়দিদি বলেছিল, ‘কাঁচা লঙ্কা ফেঁড়ে-ফেঁড়ে দিস
কাজলিমাছের ঝোলে’;— তোমারে পাব না আমি কোনও দিন খুঁজি!
তিরিশে কি কেউ মরে ? আমাদের সুরমার বর
সত্তর হয়েছে তার— দোজবর— বেচারি সুরমা!—
তবুও তো বেঁচে আছে— এয়োতির মতো সুন্দর
মাথা খাও— এসো তুমি ক্ষমা কর— ক্ষমা— ক্ষমা— ক্ষমা—
এখন অনেক রাত; এই বার বারোয়ারি-তলা
(ভেঙে যাবে); ভেঙে যাবে,-আমার কী তাতে
পাথরের বাটি ক’রে খানিকটা চিঁড়ে আর কলা
খেয়ে আমি গুঁড়িশুঁড়ি শুয়ে র’ব অঘ্রানের রাতে
আলতার শিশি আমি এখনও দিয়েছি কাছে রেখে
সিন্দুরের কৌটাটুকু রেখে দিছি বালিশের তলে
কেন ছাই?— এই বার চুপে চুপে পান সেজে— ঢেকে
বেহুলার মতো আমি যাব না-কি গাঙুড়ের জলে?
চুলগুলো রুখুরুখু— মুখখানা খড়িখড়ি দিনরাতভোর
রান্নাঘরে ঘাড় গুঁজে ব’সে আছে একা
জীবনের ঘোড়বড়িখাড়া আর খাড়াবড়িথোড়
আর-একটির সাথে মোর হয়ে গেল দেখা—
Comments
Post a Comment