এইখানে চিতা তার
এইখানে চিতা তার পঁচিশ বছর আগে উঠেছিল জ্ব’লে
চৈত্রের দুপুরে এক,— এত দিন জীবনের রুক্ষ গণ্ডগোলে
থেকে-থেকে মনে হত… পাড়াগাঁর পথে ফের আসিয়াছি চ’লে
পঁচিশ বছর পরে; কত কী-যে গন্ধমাখা আজ এ-দুপুর
কত কী-যে নীরবতা চারি-দিকে— থেকে-থেকে কত কী-যে সুর
পাতা জল পাখিদের— তুমি কই? তুমি কত দূর?
কাহার চিতার কালি ছড়ায়ে রয়েছে ঘন আমের ছায়ায়?
কাল বুঝি মরেছিল? মরণের সদ্য স্নিগ্ধ গন্ধ পাওয়া যায়
পঁচিশ বছর আগে যে মরেছে সে আজ কোথায়?
দখিন শিয়রে সে যে শুয়েছিল সেই দিন নদীর শিথানে
দু’-একটা চিল আর বুনোহাঁস— কয়েকটা শকুন তা জানে
তারাও গিয়েছে ম’রে কবে সব— সবুজ হলুদ ধানে
আষাঢ়ের কার্তিকের খেত গেছে কত বার— কত বার ভ’রে
কত বার চাঁদ অই আকাশের মেঠোপথ ধ’রে
উঠে গেছে নেমে গেছে— লাঙল রয়েছে মাঠে প’ড়ে
কত শীত জ্যোৎস্নায় একা-একা শীতল লাঙল
আর হিম জ্যোৎস্নায় শিশিরের জল
আর অই হাওড়ের ধ্বনি অবিরল
কেউ আর আসে নাই— পাতে নাই কান
হয়তো চিতার থেকে মৃতা উঠে গেয়েছিল গান
কুয়াশার গিট ছিঁড়ে মুখ তুলে শুনেছিল কঙ্কাল অঘ্রান
শহরের পথে আমি ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে
ঘুরেছি— ঘুরেছি কত অঘ্রানের রাতে
কে যেন তাহার হাত রেখেছিল হাতে
কে যেন আমার সাথে গিয়েছিল মনুমেন্ট-মিনারের নিচে
গভীর রাতের পথে কেবলই ফিরেছে পিছে-পিছে
ফোঁপানি শুনেছি তার— কেঁদেছে কেন-যে মিছে-মিছে
তবুও দেখেছি ফিরে বাতাস ফোঁপায় শুধু গাছে
পিছনে কেউ তো নাই— গ্যাসপোস্টগুলো শুধু আছে
কেউ নেই— যত দূর চোখ যায়— কেউ নেই কাছে
কেউ নেই; জানে ঐ শীতল লাঙল
আর হিম জ্যোৎস্নার শিশিরের জল
আর ঐ হাওড়ের ধ্বনি অবিরল
শুরু আর হয় না ক’ এক বার সাঙ্গ হল যাহা
আকাশের মেঠোপথে চাঁদ জানে তাহা
শুরু আর হয় না ক’ এক বার সাঙ্গ হলে, আহা
বাঁশের হলদে পাতা হা-হা ক’রে ঝরে
শুকনিরা কেঁদে যায় নদীর নীরব চরে-চরে
(শুকনিরা কেঁদে যায়) (কাঁদে কার তরে)
মন যে কেমন করে— কেমন যে করে!
বাঁশের শুকনো পাতা থেকে-থেকে ঝরে
জামের কঠিন ডাল মর্মরে মর্মরে:
‘ফসল গিয়েছে ঘরে, তুমি যাও ঘরে
ঘরে চ’লে যাও তুমি— ফসলের সাথে
একা-একা চ’লে যাও— তোমার পশ্চাতে
কেউ নাই— কেউ হাত রাখিবে না হাতে-‘
কেউ নাই; জানে ঐ শীতল লাঙল
আর হিম জ্যোৎস্নার শিশিরের জল
আর ঐ হাওড়ের ধ্বনি অবিরল।
Comments
Post a Comment